অণুগল্পঃ জ্যাম
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:২১:১৯ রাত
রাত কেটে গেলো ঘুমে ঘুমে। ঘুমাবার আগে শেষবার সালমা টের পেয়েছে, ওদের বাস ফেরি ঘাটের কাছাকাছি। বেশ লম্বা লাইন। জানালা দিয়ে একবার মাথা বের করে বাসের সুদীর্ঘ সারিগুলোকে দেখেছেও। তবে এই জ্যাম ওকে তেমন ভাবায়নি। কারণ সারা রাত তো পড়েই আছে। এখন রাত পৌনে একটা। ফেরিতে বেশী হলে ঘন্টাখানেক লাগবে। ওপাড় থেকে সাভার পর্যন্ত আরো তিন ঘন্টা। তাতে সকাল ছ'টার আগেই বাসায় পৌঁছে যাবে। তাই আটটার ভিতরে অফিসে যাওয়াটা কোনো ব্যাপারই না ভেবে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
ভোরে পাখির কিচিরমিচির আর মানুষের কথাবার্তায় সালমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ভাবলো নবীনগর চলে এসেছে বুঝি। কিন্তু আড়মোড়া ভেঙ্গে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে, সেই ফেরি ঘাটেই রয়েছে। জ্যামের তীব্রতা এতোই যে, সারা রাত প্রায় একই যায়গায় ছিল ওদের বাস। অন্যান্য যাত্রীদের কাছ থেকে শুনলো, ফেরি একটা নষ্ট এবং প্রচন্ড কুয়াশার কারণে পারাপারে বিঘ্ন ঘটছে।
সালমার বাবার অসুখের কারনে তিনদিন ছুটি পেয়েছিল। যে গার্মেন্টসে সে চাকরি করে সেটা বিদেশী মালিকের হলেও, ওর বস লোকটা প্রচন্ড হারামি টাইপের। ছুটিছাটা মোটেই দিতে চায় না। আজ টাইমলি অফিসে যেতে না পারলে লোকটার ব্যবহার যে কতটা রুঢ় হবে, ভেবে সালমার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। বুকের গভীর থেকে কিছু দীর্ঘ নিঃশ্বাস জানালার কাঁচে কষ্টের ছাপ রেখে উবে গেলো।
এক ফেরি ঘাটে, কুয়াশায় ভেজা এক ভোরে... খোলা জানালা দিয়ে প্রবেশ করা ঠান্ডা বাতাস অনুভব করতেই সালমা নামের এক সেলাই দিদিমনি নিজের শরীরের কাপড় ঠিকঠাক করে উষ্ণ হতে চেষ্টা করে। কিন্তু মনের গভীরে প্রচন্ড এক শীতল অনুভূতি থেকেই যায়। নিম্নবিত্তদের জীবনে নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা কি কখনো আসে?
বিষয়: সাহিত্য
৯০৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খারাপগুলোও আছে। হয়তো আপনার বিবেচনাবোধ এতোটাই ভালো যে, চোখে পড়ছে না। সামনে পড়বে হয়তো,
ভালো লাগলো আপনার মন্তব্যটি। শুভেচ্ছা রইলো, অনেক অনেক। ভালো থাকবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন